একটি নক্ষত্রের পতন/(আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ)
মহানন্দপুর বিজয় স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালেয়র চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, আমার ফুফাত ভাই,আমার ২ বছরের বড়, ৫ ভাইয়ের ৩য়, আমার একজন খুবই কাছের মানুষ, আব্দুর রাজ্জাক মিয়া গত ১৯জুন (বুধবার) ভোরে ৫:৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ।( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মহান আল্লাহ আমার এই ভাইটাকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন,এবং মরহুমের শোক সন্ত্রস্ত পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দান করুন। আমিন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩২ বছর ৫ মাস ১৮ দিন চাকুরী জীবনের অবসান হল রাজ্জাক ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে । ১৮/১৯ জন ষ্টাফের পরিবারের মধ্যে আমাদের সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় অবস্থান করতে হয়,কত হাসি কত গান,কত গল্প,পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে হয়। স্যারদের কতজনের কত আবদার কত ফাই-ফরমাইজ করতে হতো,এ রাজ্জাক ভাইকে।
বিদ্যালয় শুরু করার সময় কালাম মাস্টার আমির হামজা এবং আমি লতিফ মাস্টার ৩ জন একত্র হয়ে চিন্তা করেছিলাম স্কুল করার। আমরা প্রথমে শামসুল হক স্যারের বাসায় যাই। সামছুল হক স্যারের সাথে স্কুল করার ব্যাপারে আলোচনা করি। তিনি প্রথম আমাদের কথা শুনে কি যেন ভাবলেন এরপর বলতে লাগলেন, তোমরা কি পারবে? আমি মাদ্রাসা করার চেষ্টা করছিলাম পারি নাই, আমরা তিনজন একত্রে বললাম আমরা অবশ্যই পারব তবে আপনার সহযোগিতা লাগবে। স্যার বললেন তাহলে একটা কাজ কর। এলাকার গণ্য মান্য ব্যক্তিদের চিঠি দিয়ে দাওয়াত করে মিটিং করতে হবে আগে। দিন তারিখ ঠিক করে আমরা তিনজন বসে পড়লাম হাতে লেখে চিঠি তৈরি করলাম। দেবল চালা, বাসার চালা, নয়ার চালা, তৈল ধারা, বার ঘুটিয়া,বারখাদা, বেড়িখোলা, তাড়া কুরি, মহানন্দপুরের সকল গন্যমান্য ব্যাক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হলো জয়নাতলে মিটিং বসা হল। মিটিংয়ে ফল প্রশু আলোচনা হল। দুর্বার ছাত্র সংঘ প্রধান ভূমিকা পালন করল। টিচার হিসেবে ৭/৮ জনের নাম আসলো। প্রধান শিক্ষক কে হবেন? নানা জানে নানান প্রস্তাব করলেন, শেষে সিদ্ধান্ত হলো সামছুল হক স্যারকে প্রধান শিক্ষক থাকতে হবে। বিদ্যালয়ের জমি দিবেন সামছুল হক স্যার, বিদ্যালয়ের নামও ঠিক করলেন “মহানন্দপুর বিজয় স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়”। একাত্তরের মহান বিজয়,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কাদেরিয়া বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নামটি সকলের পছন্দ হলো। এলাকায় তেমন কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি নাই যে ১০- ২০হাজার টাকা দিবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে ওসমান মেম্বার কাকড়াজানে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থী,তাকে দাওয়াত দেয়া হলো ক্লাবে, তিনি ৫ হাজর টাকা স্বীকার করলেন ক্লাবে দিবেন আমরা তার হয়ে সকলে নির্বাচন করব। মরহুম ওসমান মেম্বার সাহেব আজ দেই কাল দেই বলে ২/৩ মাস টাকা দিতে বিলম্ব করলেন। তিনি একদিন মহানন্দপুর বাজারে আসলেন আমি তাকে আক্রমণাত্মক কয়েকটি কথা বললাম,বললাম আজকে টাকা দিয়ে যাবেন নইলে আপনাকে যেতে দিব না, বেচারা আমার প্রতি মনেক্ষুন্ন হলেন, তারপর পকেটে হাত দিয়ে ৪ হাজার টাকা আমার কাছে দিলেন। আমরা ২০০ টাকা ক্লাবের ক্যাশে রেখে ৩৮০০ টাকা দিয়ে সাত জোড়া বেঞ্চ বানালাম। ০১/০১/৯২সাল হতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী দুই ক্লাস শুরু করলাম। আমাদের নিজস্ব কোন ঘর নাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস স্যারকে গিয়ে বললাম আপনার অফিসে আমাদেরকে বসতে দিতে হবে এবং আপনার ওই ভাঙ্গা মাদ্রাসা ঘরে এক দুইটা ক্লাস করতে দিতে হবে, তিনি সানন্দে আমাদের গ্রহণ করে নিলেন। আমরা কখনো গাছ তলায়,কখনো ওই ভাঙ্গা মাদ্রাসায় দুই ক্লাস চালাইতে লাগলাম। বিএনপি গভঃমেন্ট শাহজাহান সিরাজ দল থেকে বিএনপিতে যোগ দিবেন,তার নিকট যাওয়া হল স্কুলের কথা বলায় তিনি মাঠ ভরাট প্রজেক্টে ২০ টন গম মঞ্জুর করলেন। অবশেষে ১৭ টন গম বিক্রি করে অর্ধেক টাকা দিয়ে বর্তমান বিল্ডিংয়ের নিচে প্রায় ১২-১৪ ফিট গর্ত ছিল, সেটা ভরাট করা হলো। বাকি টাকা স্কুল মঞ্জুরের জন্য জেনারেল ফান্ডে ব্যাংকে জমা করা হলো। হেড স্যারকে বললাম আমরা- আপনি মঞ্জুরির কাজে আগায়ে যান, আমরা স্কুলের ক্লাস নেব। তিনি ২-৩ বার ময়মনসিংহ গেলেন। আমাদের সাথে কেজিকে উচ্চ বিদ্যালযয়ের প্রধান শিক্ষকও। সংবাদ পেলাম এক সপ্তাহ আগে কেজিকে উচ্চ বিদ্যালয় এর কাগজপত্র জমা দিয়েছেন,আমরা পিছে পড়ে গেলাম। সামছু স্যারের ডায়রিয়া হয়েছে,ময়মনসিংহ যেতে পারবেন না, এদিকে সময় চলে যাচ্ছে, আমিসহ কয়েকজন স্যারের বাসায় গেলাম,স্যারকে বললাম কেজিকেরা কাগজ জমা দিয়ে দিয়েছে, আমরা যদি আজ – কালের মধ্যে না যাই তাহলে ১ বছর পিছিয়ে যাবো। স্যার বললেন আমি অসুস্থ,তোমরা যদি কেউ আমার সাথে যাও তাহলে আমি যেতে পারি। আমি বললাম আমি যাব। আপনি তৈরি হন। পরদিন আমি এবং হেডস্যার ময়মনসিংহ গেলাম। সম্ভবত বুধবার ছিল পরের দিন বৃহস্পতিবার,শুক্রবার বন্ধু। কেরানী কাশেম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তিনি বললেন আপনি কেন এত দেরী করে আসছেন? আপনার আগে সবাই কাগজপত্র জমা করে গেছে, দেন দেখি আপনার কাগজপত্র। তিনি কাগজপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলেন। তিনি বললেন এই কাগজপত্রে মঞ্জুরি হবে না। কাসেম সাহেব টাঙ্গাইলের মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয় এর কাগজপত্র দিলেন – এবং বললেন আজ রাতের মধ্যে সকল কাগজ পত্র হুবহু এগুলার মত লিখে জমা করবেন কাল দশটার মধ্যে, নইলে কিন্তু আপনার বিদ্যালয় এক বছরের জন্য পিছিয়ে পড়বে। আমি বললাম দেন আপনি কাগজপত্র আপনার এটার মতই কাগজ পত্র তৈরি করে এক রাতের মধ্যেই দিয়ে দিব। স্যারে কাগজপত্র করছিলেন কে.জি.কের টা দেখে যা ভুল হয়েছে। আমরা দুজনে কাগজপত্র নিয়ে সাদা কাগজ স্কেল যাবতীয় সরঞ্জাম কিনে একটি আবাসিক হোস্টেলে উঠলাম । অল্প কিছু খানাদানা করে তারপর থেকে আল্লাহর নাম মুখে নিয়ে শুরু করলাম লেখা, শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় ঘন্টা। রাত আড়াইটা তিনটা পর্যন্ত লিখলাম। পরদিন বৃহস্পতিবার ১০/১১ টার দিকে অফিসে গেলাম। কাসেম সাব কাগজপত্র দেখে খুশি হলেন এবং বললেন আপনার কাজটা হবে। আমরা মঞ্জুরি পেলাম কিন্তু কেজিকে ১ বছর পিছিয়ে পড়লো, তাদের টা হলো না। স্কুল এমপিও ভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করা হলো। স্কুল এমপিও হয়ে গেল। ১১ মাসের বিল এরিয়া হিসাবে পেলাম সবাই। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর বেতন পেলাম সবাই। 19৯৫ এর জুলাই মাসে বিল পেলাম।
পরবর্তীতে বিল্লাল হোসেন, কুদরত আলী, আব্দুস সালাম বকুল এই তিনজনকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলো ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে। মোহাম্মদ স্যারকে সহকারি প্রধান নিয়োগ দেওয়া হলো। এ চারজনের বিল করা নিয়ে শুরু হলো নানা টালবাহানা,মোহাম্মদ স্যার নিজের চেষ্টায় তার বিল করাইয়া আনলেন। এ তিনজনের বিল করাতে পারলেন না সামছুলক হক স্যার। ৭ বছর বিনা পয়সায় শিক্ষকতা করে শূন্য হাতে তাদেরকে ফেরত যেতে হলো। অন্যান্য স্কুলের ১৪ জনের বিল করা হলেও আমরা দশ জনে থেমে গেলাম ৯৫ এর জনবল কাঠামোতে। ২৪ বছর চাকুরী জীবনের সমাপ্তি করলেন সামছুল হক স্যার। 20১৫ সাল। শুরু হলো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা কৌশল অপকৌশল। যে মোহাম্মদ সারকে প্রথম শিক্ষক হিসেবে অন্য কোথাও যেতে দেন নাই সামছুল হক স্যার, ইঙ্গিত করেছিলেন তখন আমি গেলে আমার শুন্য স্থান তুমি দখল করবে,নড়াচড়া কইরো না। সেই মোহাম্মদকে তিনি কোনভাবেই প্রধান শিক্ষক হতে দিবেন না,শিক্ষকদের মধ্যে দুই গ্রুপ হয়ে গেল। আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সিনিয়র হিসাবে (হাফিজ স্যার মোহাম্মদ স্যার) আবেদন করার পর । আমি প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী প্রধানশিক্ষকও হতে চাইনি,শুধু দু,এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত হবো এটাও করতে চায়নি তখনকার কমিটি বিশেষ করে সামছুল হক স্যার, তার চাচা শশুর মরহুম কদ্দুস খলিফাসহ অনেকে। মহানন্দপুর এক দফা মিটিং করে টাঙ্গাইল গিয়ে শহীদ সাহেবের বাসায় মিটিং বসা হলো, শহীদ সাব বললেন সিনিয়র হিসেবে ম্যানোয়ালী যে আসে সেই হবে ভারপ্রাপ্ত। আমার নাম আসাতে শহীদ সাব বললেন, এটাই ভাল হবে। মাওঃ লতিফকে করা হোক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আমি দুই মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে যা যা দেখলাম আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। এ যাবত আমরা শুধু পড়াইনা শিক্ষক ছিলাম অফিসিয়াল কিছু ধারণা আমাদের কারোরই নাই। দেখলাম সাবেক প্রধান শিক্ষক ব্যাংকের সকল একাউন্ট নিজের নামে করা, এমনকি এফডিআরও। 3বছর আগে লাইব্রেরীয়ান নিয়োগ দিয়েছেন তাকে বিনা ছুটিতে রেখেছেন কোন নিয়মের বালাই নাই,কি অবস্থায় কি করছেন হযবরল অবস্থা। মিটিং ডাক দিলাম এসব কিছু আলোচনায় এলো। ব্যাংক একাউন্ট নিয়ম মাফিক যৗথ করার সিদ্ধান্ত হলো। লাইব্রেরীয়ানকে পর পর তিন নোটিশ করে কাজে যোগদান না করলে নিয়োগ বাতিল করে নতুন লোক নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। স্কুলের অনেক কাগজ পত্র বিশেষ করে ছাত্রদের সার্টিফিকেট/মার্কসিট এগুলোও সাবেক প্রধানের বাড়ীতে সেগুলোও বিদ্যালয়ে আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। পর পর দুই নোটিশ পাওয়ার পর লাইব্রেরীয়ান রাশেউল এসে হাজির হলো। বললো আমি যোগদান করতে চাই,আমি ছুটিতে আছি,কিন্তু কোন ডগোম্যান্ট দিতে পারলোনা। তার পরেও তাকে চাকুরীতে বহাল করা হলো। কাগজ পত্রের জন্য নিজেই আঃ খালেক মাস্টার সাহেবকে নিয়ে বাসায় গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে এমনকি নেপের নিজ থেকেও, অনেক সার্টিফিকেট ওই পোকায় খেয়েও ফেলেছে,সেগুলো উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে আসলাম। ২ মাসের মধ্যে সকল কিছু আবগ্রেড করাতে সামছু স্যার আমার উপর বিষনভাবে ক্ষেপে গেলেন,আমার ভারপ্রাপ্ত কেরে নিয়ে মাসুদকে দেওয়া হলো। মাসুদ ২মাসের মাথায় ছেড়ে দিলে আঃ কদ্দুস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলো। শেষে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হলো স্কুলেই । মোহাম্মদ স্যার সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হলেন। এক্সপার্ট যিনারা আসছিলেন সুপারিশ করে গেলেন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ কদ্দুসকে ম্যানেজ করে সকল কাগজ পত্র নিজের দখলে নিয়ে নিয়োগ স্থগিত করেন সাবেক প্রধান শিক্ষক (সামছুল হক স্যার) । তখন সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আলম শহীদ। কাদেরিয়া মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, এই সম্মানীয় মানুষটাকে দিয়ে তাঁকে ভুল-বাল বুঝিয়ে মোহাম্মদ সারের প্রধান শিক্ষক হওয়া চির তরে বন্ধ করে দিলেন। খাবার থালা সামনে থেকে নিয়ে গেলেন তৎকালীন কিছু ব্যাক্তি। এক জনের হক নষ্ট করে দিলেন। এটা হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক্ক। কিয়ামতের দিন পরের হক যারা নষ্ট করছেন হাদীস কোরআন ঘেটেঘুটে দেখবেন কি স্বাস্তী তাদের জন্য অবদারিত, জেনে মইরেন। এরপর সামছুল হক স্যার নিজে সভাপতি হয়ে কামরুল হাসান স্যারকে নিয়োগ দিয়েছেন। সে নিয়োগ নিয়েও নানান অভিযোগ রয়েছে, রয়েছে নানান গুঞ্জন । আমরা কামরুল হাসান স্যারকে আগে থেকেই চিনতাম। আমাদের ছাত্রের বসয়সেরও কম তিনি। একদম জুনিয়র মানুষ। সহকারী প্রধান বা প্রধান কোনটিই তিনি ছিলেন না। ভাগ্যক্রমে ঐ সময় সরকারের একটা প্রজ্ঞাপণ ছিল এমন, প্রধান শিক্ষক যে কোন সহকারী শিক্ষকই ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞ হলেই হতে পারবেন প্রধান শিক্ষক। সামছু স্যারের এমন সিদ্ধান্তে আমরা যথেষ্ট কষ্ট পেলেও কিছু করার ছিলনা আমাদের। মেনে নিতে বাধ্য হলাম নতুন প্রধান শিক্ষককে । কিন্তু যে ২ খন্ডে শিক্ষক বিভক্ত করে গেছেন তা কাটিয়ে ঊঠা এখনো সম্ভব হয়নি। এখনো স্বজন-প্রীতি আছে। যাদের জন্য আজ স্কুল হয়েছে যাদের ত্যাগের শেষ হবে রাজ্জাক ভাইর মতো মরে গেলে। প্রারম্ভে কালামকে ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য করটিয়া পাঠালাম আমি। এক জায়গা থেকে টাকা ম্যানেজ করে। বললাম পরীক্ষার ২ মাস আছে পড়ে পরীক্ষা দিয়ে তার পর স্কুলে আসবা। ঠিক ২ আড়াই মাস পর পরীক্ষা দিয়ে তার পরে স্কুলে কালাম আসলো। এ ২ মাস হেড স্যারের বকুনী সহ্য করতে হয়েছে এবং আমার নিজেকে কালামের ক্লাশ নিতে হয়েছে। ৯৫ সালে বিএডে যাবে হাফিজ স্যার, কালামও পাছ ধরলো। হেডস্যারকে বললো হেডস্যার কোন ভাবেই রাজি হলো না। শেষে কালাম বললো আমি আমার ভাগিনা বকুলকে বদলী টিচার হিসেবে দিয়ে যাব তাও আমাকে এবারই যেতে দিতে হবে। আমি স্যারকে রিকুয়েষ্ট করলাম। সকল স্যারদের বললাম ২জনকে দিলে তারা তাড়ী সকলেই বিএড এর সুযোগ পাচ্ছেন,তাই সকলে রাজী হলো। কালাম হাফিজ স্যার বিএডে চলে যাওয়ার পর সাকুর্লার দিয়ে মোহাম্মদ স্যারকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেও্য়া হলো।
এক সপ্তাহ বকুলকে ক্লাশে পাঠানো হলো কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা ওর পড়া মানতে চায়না। শেষে কি আর করা বকুলকে না করে দেওয়া হলো। সকল দায় ভার আমার উপর। কি আর করার কালামের সকল ক্লাশ আমাকে নিতে বাধ্য করা হলো। আমি নাছুর বান্দার মত ক্লাশ করে যেতে লাগলাম। অবশ্য মোহাম্মদ স্যার আসার পর আবার একটু কষ্ট দূর হলো।
৯ম- 10মে কম্পিউটার ক্লাশ আসলো পড়াবে কে তাও আমার ঘারে। কম্পিউটার শিক্ষক নাই কিন্তু কম্পিউটার পারদর্শী শিক্ষক থাকলেই চলবে। আলাদা কোন শিক্ষক নেওয়া যাবেনা কারণ আমাদের প্যাটানের বেশী ১জন নেওয়া আছে। অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে শিক্ষক নেওয়া যাবেনা। অগত্যা আমাকেই ঐ সাবেজেক্ট ৫-৬ বছর পড়াতে হয়েছে।
২০১৪ সালে ঢাকায় 6দিনের কারিকুলাম মাস্টার ট্রেনিং এ গেলাম। সেখানে বোর্ডের সহকারী বোর্ড কন্টোলার তার বক্তব্যে বললেন- সাবেজেক্ট টিচার না থাকলে ওই সাবেজেক্ট টিচার নিয়োগ দেওয়া যাবে, এবং তার বেতনও হবে, যদিও অতিরিক্ত শিক্ষকও থাকে। সামছু স্যারকে বললাম। কম্পিউটার শিক্ষক নেন। সেই থেকে সালেহা মেডাম আমাদের কম্পিউটার শিক্ষক। টানা 30 বছর হিন্দুদের ধর্ম ক্লাশ নিতে হয়েছে এ অধম ব্যাক্তিটির। ৫ ক্লাশে মুললিম ধর্ম ৫ ক্লাশে হিন্দু ধর্ম পড়াতে হতো। এখন অবশ্য ইতি সরকার আমাদের হিন্দু শিক্ষক ।
এরপর তিনজন কর্মচারী নিয়োগকে নিয়ে জামেলা তৈরী হলো । সামছুল হক স্যার সভাপতি হয়ে নিজে পরাজিত প্রার্থীদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। তাঁর কোন স্বার্থ হানী হয়েছে তা আমরা জানিনা। আমরা শুধু যা দেখলাম সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সাথে থেকে নিজের স্বাক্ষর করে প্রকাশ্য জন সম্মুখে রেজাল্ট ঘোষণা করা হলো। রেজাল্ট ঘোষণা করার পর তিনি বললেন এই নিয়োগ সঠিক হয় নাই এটা বাতিল কর।কিন্তু নিয়োগ বোর্ডের সকলেই বললেন,সুন্দরনিরপেক্ষ পরীক্ষার মাধ্যমে যারা প্রথম হয়েছে তাদেরকে নিয়োগ দান করা হয়েছে, কোন প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয় নাই, নিয়োগ বাতিল করতে হবে কেন? এই মতপার্থক্যের কারণে সভাপতি সাহেব পরাজিতদের দিয়ে মামলা করালেন। মামলা চলছে দেড় বছর ধরে। ৩জন কর্মচারী স্কুলে আসলে রাজ্জাক মোবারকের কিছুটা হলেও কাজ হালকা হতো। কিন্তু অসুস্থ রাজ্জাক অসুখ নিয়েই তাকে কষ্ট করতে হয়েছে, অফিস করতে হয়েছে, ঝাড়ু, মোছা করা হয়েছে,দুই বছর ধরেই রাজ্জাক ভাইয়ের কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার কাজ হালকা না করে আরো ভারী হয়েছে। যে সময়টা রেস্ট নেওয়ার কথা, সেই সময় তাকে আরো বেশি কাজ করতে হয়েছে, যার জন্য তাকে অকালে খশে পড়তে হলো বৃন্ত ছেড়ে। এমন করে হয়তো আমাদেরও একদিন হারিয়ে যেতে হবে। কেউ কারো খেয়াল রাখেনা।
আমি আমার লেখনিতে লিখে যাই ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে জানতে পারে এসব। আমার দাদা মরহুম ওয়াহেদ শিকদারের বিশেষ দানে এই মহানন্দপুরের গোড়া পত্তন। সেই ১০০ বছর পূর্বে এই যায়গায় ৪২ হাত মাদ্রাসা ঘর যিনি করে দিলেন। যিনি মাদ্রাসার জন্য জমি কিনে দান করে দিলেন কৈ সে দানের বদৌলতে কোন দিন তার নাম পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোন অনুষ্ঠানে। মদন দার পিতা হরচন্দ্রের নিকট হতে জায়গা ক্রয় করা হয়েছে সাড়ে ৪ পাখি। তার মানে ১৯২ শতাংশ। যা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে আর ও আর আছে,যা বের করেছিলেন ততকালীণ প্রাঃ বিঃ প্রধান শিক্ষক শাহজাহান স্যার। মাদ্রাসার নামে প্রায় ৪ একর জায়গা আছে। দলিল পত্র আমার দাদা সকল কিছু তার বন্ধু দেনতুল্লাহর কাছে রেখেছিলেন-কারণ তিনি তেমন পড়া লেখা জানতেন না। স্বাধীনতার পর যখন মাদ্রাসা করতে চেষ্টা করা হলো বাঁধা ছিল এক জায়গায় -জমির দলিল। সব কিছু সামছুল হক স্যারের কাছে কুক্ষিগত।
মাদ্রাসার জায়গা বিক্রি করে ঘর দিচ্ছেন, কিন্তু জনগণের সমর্থন কতটুকু আছে আপনার উপর সেটা ভাবতে হবে আগে। মাওঃ রুহুল আমিন স্বাক্ষী মাদরাসা করতে পারি নাই শুধু দলিলের অভাবে। সকল কাজ রেডি কিন্তু দলিল নাই। তার আফছোস আমি ৩/৪টা স্কুল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা: কিন্তু আমার গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারি নাই। আমার পূর্ব পুরুষরা আজ আমাকে দীক্কার দিচ্ছে। কালক্রমে সবি বের হবে। ঐ যে, উপরে যিনি বসে আছেন তাকে ফাকি দেওয়ার সাধ্য কোরোর নেই। দুনিয়ায় ফাকি দিয়ে যশ খ্যাতি অর্জণ করতে পারবেন ঠিকই কিন্তু ঐ উপরওয়ালার নজরকে তো ফাকি দেওয়া যাবেনা। মহান আল্লাহ বলেন ,তিনি {রাসূল সাঃ} বললেন, আমার রব নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সব কথা সম্পর্কে অবগত এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ । সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৪। তিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবই দেখেন সবই শুনেন।
Leave a Reply