বার্তা সম্পাদক মোঃ মোশারফ হোসেন
সম্পূর্ণ অপরাজিত থেকে সাফ-ফুটবলে বিজয়ী হয়েছে বাংলার অনূর্ধ্ব পনেরো-এর নারী ফুটবলারা। বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে এখন এই সময়ে এটিই সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। বিশ্ব দরবারে তারা উড়িয়েছে লাল সবুজের পতাকা। অপরাজেয় এই ফুটবল নারীদলের বিক্রমে বাংলার মর্যাদা আজ উন্নীত-উড্ডীন। উল্লিখিত বাংলার অমিত নারী ফুটবলারদেরই যেন প্রতিচ্ছায়া দেখতে পাওয়া গেলো টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার ছিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে নারী ফুটবল দলের মধ্যে। তারা সখিপুর উপজেলার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কদিন আগেই। এরপর তারা টাঙ্গাইল জেলায় অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে গত শনিবার সেখানে তারা এক শূন্য গোলে হেরেছে। কিন্তু এ কথা ধৃষ্টতা নিয়েই বলতে পারা যায় যে জেতা বা হারা সেটা গৌণ মুখ্য হচ্ছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সক্ষমতা প্রমাণ করা সখিপুরের এই খুদে নারী ফুটবল দলের সদস্যরা সে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। বর্তমান সময়ে নারীদের স্বাচ্ছ্যন্দময় পরিধেয় পোশাক নিয়ে যেখানে কূট-বিতর্কে সয়লাব সারা দেশ; নারীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চা নিয়ে বাকাচোখের দৌরাত্ম্যের যেখানে শেষ নেই; নারীর সহজ, সাবলীল ও সহজাত অধিকার প্রতিষ্ঠায় যেখানে এখনো সমাজের প্রগতিশীল অংশকে সোচ্চার থেকে গলদগর্ম হতে হয় সেখানে নারীদের ফুটবল মাঠে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজেদের মনুষ্যত্বের মর্যাদায় সমুন্নতিদান করবার চেষ্টা, এটা কম কথা নয় হোক সে নারী বয়েসে যতই ক্ষুদ্র। আজ যে ক্ষুদ্র, আগামী দিনেই সেই হয়ে ওঠবে বিশাল-বিরাট-বৃহৎ এতে কোনোই সন্দেহ থাকার কথা নয়। কে জানে ছিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই খুদে নারী ফুটবল দলের ভেতরেই লুকিয়ে আছে হয়তো সদ্য উপমহাদেশ জয় করা কৃষ্ণা রানী সরকার, রুপনা চাকমা, আঁখি খাতুন, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার, সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহানরা। চর্যাগবেষক, জাতীয় সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক সাবেক প্রিন্সিপাল আলীম মাহমুদ সখিপুরের এই খুদে নারী ফুটবল দলের প্রতি নিষ্কলুষ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাতে পেরে আনন্দিত ও উচ্ছবসিত তাদের হারা বা জেতার জন্য নয়, প্রতিযোগিতায় তাদের তুমুল অংশগ্রহণের জন্য। বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জাতীয় সংস্কৃতির বহুত্বকেই লালন করে চলেছে, এই নারী ফুটবল দলটি যেন তারই এক প্রামাণ্য প্রতিচ্ছবি। বিপুল উৎসাহ ও তুমুল উদ্যোমে এগিয়ে যাও সখিপুরের অপ্রতিরোধ্য দামাল কন্যাসহ বাংলার খুদে থেকে পরিণত সকল বয়সী নারীকুল যারা অপসংস্কৃতির শৃঙ্খলভাঙায় থাকবে সদা প্রস্তুত। মনে রেখো সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও জাতীয় সংস্কৃতি কতটুকু উন্নত হয়েছে বা হচ্ছে তা বোঝা যাবে সমাজে তোমরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছো এমনটাই বলেন আলীম মাহমুদ ।
Leave a Reply