নিজস্ব প্রতিনিধি;
সখিপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত মাজহারুল ইসলাম (২২) নামের কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে । সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত দেড়টায় রাজধানী ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কলেজ ছাত্র মারা যায়। মাজহারুলের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।
নিহত মাজহারুল উপজেলার কালিয়ান গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। সে টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার কালিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে শুক্রবার(৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এলাকার বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের সমন্বয়ে এক ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে আসা মেয়েদের নানাভাবে উত্যক্ত করে কালিয়ান দোহানিয়া পাড়ার কয়েকজন বখাটে ছেলে। এ সময় মাজহারুল তাদের উত্যক্ত করতে নিষেধ করলে ঘটনাস্থলেই তাকে কিল, ঘুষি দেয় স্থানীয় বখাটে ইয়ারুল ও তার সহযোগীরা। এর পর খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে আবারো কালিয়ান গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে ইয়ারুল ইসলাম (১৯), রশিদ মিয়ার ছেলে ছাব্বির আহমেদ (১৯),মৃত কুদ্দুস মিয়ার ছেলে ফরিদ মিয়া, শহীদ মিয়ার ছেলে শান্ত মিয়া,মৃত কুদ্দুসের ছেলে শহীদ মিয়া, মো.আনোয়ারের ছেলে আলমগীর হোসেন আসাদ, মো.আনোয়ারের ছেলে সুজন মিয়া, নজরুল ইসলামের ছেলে স্বাধীন মিয়া, মৃত কুদ্দুসের ছেলে রশিদ মিয়া এবং বাসাইল উপজেলার মান্দারজানি এলাকার ইসমাইল মিয়ার ছেলে আলী হোসেন,বুলবুল মিয়ার ছেলে তানজিদ,মানিকের ছেলে সিয়াম সহ ২০/২৫ জনের একটি সঙ্ঘবদ্ধ দল লোহার রড, দা, দিয়ে মাজহারুলের উপর আবার আক্রমণ করে।এ সময় চিৎকার শুনে তার বাবা ও অন্যান্যরা মাজহারুলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সখিপুরিউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার রাত প্রায় ১ টা ১৫মিনিটে মাজহারুলের মৃত্যু হয়
সরেজমিনে কালিয়ান গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্তদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ থানা পুলিশ খুনের বিষয়ে কোন তৎপরতা দেখা যায়না। হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এলাকালাবাসী জানায়, এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। তাঁরা দল বেঁধে স্কুলের কলেজের মেয়েদের বিরক্ত করে । তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না । তাদের নামে থানায় মামলাও আছে । এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মাদক বিক্রি করে এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংস করছে । এরপর তারা আরো ঘটনা ঘটাতে পারে তার আগেই তাদের বিচার হওয়া দরকার । যাতে করে আর যেন কোন মায়ের বুক খালি করতে না পারে । এই কিশোর গ্যাং নির্মূল করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি করেন এলকাবাসী ।
নিহতের বোন টাঙ্গাইল জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আমার ভাইকে খুন করেছে ।ওই খুনিরা আমার ভাইকে আর বাঁচতে দিলো না । এই খুনের সাথে যারা যারা জড়িত তাদের সবার বিচার চাই ।
মাজহারুলের বাবা আ. মালেক কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে পারলাম না। কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ছেলেটা অবশেষে মারাই গেল। আমি হামলাকারীদের ফাঁসি চাই।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম প্রতিবেদক জানান,হামলার ঘটনায় মাজহারুলের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলাতেই ৩০২ ধারা যুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply