ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হলো হজ। হজ আর্থিক এবং শারীরিক কসরতের ইবাদত। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট কিছু নিয়মে হজ পালান করা হয়। হজ রবের নৈকট্য লাভ, আদেশ পালনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বাইতুল্লাহ শরিফের গিলাফ ছোঁয়া, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, আরাফাতের ময়দানে, মাদিনাতুল মুনাওয়ারা রাসূলের স্মৃতির সাথে মুলাকাত, হজরত হাজেরা আ:-এর স্মৃতিচারণ। মোট কথা, হজের প্রতিটি বিষয় মিলে মুসলমানদের পুঞ্জীভূত স্বপ্ন, আবেগ, ভালোবাসা, মহাত্ম্যে জড়িত একটি ইবাদত।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘এবং তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও উমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন করো’। (সূরা বাকারা-১৯৬) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্য মানুষের ওপর পবিত্র ঘরের হজ করা (অবশ্য) কর্তব্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা অস্বীকার করে (তাহলে সে জেনে রাখুক) আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সূআল-ইমরান-৯৭)
প্রত্যেক হজ পালনে সামর্থ্যবানের ওপর জীবনে একবার হজ পালন ফরজ। এটি সবাই জানি। হজ শুধুই গতানুগতিক ধারার একটি ইবাদত এমন নয়। ইসলামের প্রতিটি ইবাদতের মধ্যেই তাৎপর্য থাকে। হজের অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে- হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।
একজন মুসলিম বিশ্বের দরবারে অন্যতম মর্যাদায় সমাসীন। সে মোটেই ছত্রভঙ্গ কোনো উম্মাহ নয়। তার মধ্যে নেই জাতি, গোত্র, বর্ণ, উঁচু-নীচু শ্রেণিভেদ। বাইতুল্লাহ, আরাফাতে গিয়ে মুসলিম খুঁজে নেয় যেন আপন পরিচয়। তারা ভিন্ন দেশ, ভিন্ন ভাষা, কালচার, দৈহিক গঠন-বর্ণের ভিন্নতার ঊর্ধ্বে গিয়ে মহান রবের কাছে নিজেকেই সঁপে দেয়। তার মানে, আমরা চাইলেই জাগতিক সব ভিন্নতার ঊর্ধ্বে গিয়ে এক হতে জানি। হজকে ঘিরে মুসলিমদের বিশাল এই জমায়েত এ কথারই জানান দেয়, হে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ! তোমরা যেমন সব বেড়াজাল চূর্ণ করে, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি তুলে এ জামাতে মিলিত হয়েছ, তেমনি ইসলামের বিরুদ্ধে কোথাও কেউ আঘাত হানলে এক প্রভুর তাকবির তুলে একত্রিত হতে পারো।
তুমি কোন দেশের, কোন ভাষার সেটা মুখ্য নয়। ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল সা:, কুরআনের পক্ষে তোমাদের ভাষা একটাই- ‘আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু-আন্না-মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ!’ তোমাদের পরিচয় একটাই- আমি তুমি আমরা সবাই মুসলমান।
ইসলামের বিরুদ্ধে কোথাও কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইলে বিশ্ব মুসলিম মুষ্টিবদ্ধ হাতের মতো একত্রিত হয়ে তা প্রতিহত করবে। এটিই মুমিনের শান। ইসলাম কোথাও আপস করতে শেখায়নি।
সমস্ত ভিন্নতা পেছনে ফেলে আরাফার ময়দানে সম্মিলিত হওয়া, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা, একই ধ্বনি তোলা এই সাক্ষ্যদান শুধু হজেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এ তো আল্লাহর প্রতি বান্দাদের পরোক্ষ বশ্যতা, সারা জিন্দেগি ঐক্যকে আঁকড়ে ধরার প্রতিজ্ঞা। একতার সুবার্তা পৌঁছে দেয়া পৃথিবীর দিকে দিকে। আমরা অবিচ্ছেদ্য এক মুষ্টিবদ্ধ জাতি। সারা বিশ্ব থেকে যত মুসলিম-মুসলিমা হজ পালন উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর কাছে অবস্থান করছেন। তাদের হজগুলো আল্লাহ মাকবুল করুন। আমাদের হজের প্রকৃত অর্থ বোঝার তৌফিক দান করুন।
Leave a Reply